নামায প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। আর নামায জান্নাতের চাবি | তাই সঠিক পদ্ধতিতে নামাজ শিক্ষা এবং নামায পড়া আমাদের জন্য অপরিহার্য | এখানে আমরা নামাজ শিক্ষার আগে জানবো নামায সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা |রাসূল সা. বলেছেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ যারা সুন্দরভাবে আদায় করে আল্লাহ তা’আলা তাকে ৫টি বিশেষ পুরুস্কার দান করে সম্মানিত করবেন-
(১) তার থেকে মৃত্যুও কষ্ট দূর করে দিবেন। (২) কবরের শাস্তি থেকে তাকে মাফ করে দিবেন। (৩) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে ডান হাতে আমালনামা দান করবেন। (৪) তড়িত গতিতে ফুলসিরাত পার করবেন। (৫) বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন ।
অতএব সঠিকভাবে নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা শিখে নেওয়া জরুরী । রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ তা’আলা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন।ফরজ নামাজ
দৈনন্দি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ।
(১) ফজর – দুই রকাত ফরজ।
(২) জোহর – চার রাকাত ফরজ। (শুক্রবার জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত ফরজ পড়তে হয়)
(৩) আছর – চার রাকাত ফরজ।
(৪) মাগরিব – তিন রাকাত ফরজ।
(৫) এশা – চার রাকাত ফরজ ।নামাজের ওয়াক্ত
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয়, হাদীসে পাকে তার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা এসেছে। এসকল হাদীসের আলোকে বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই নামাজের সময় সূচীর চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয় এসকল ক্যালেন্ডার থেকে আমরা যেনে নিতে পারি ।
অজু করার নিয়ম ও অজুর মাসায়েল অজুর ফজিলতসমূহ
১- অজু আল্লাহর ভালোবাসার কারণ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
(إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ)
{নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।} [সূরা আল বাকারা : ২২২]
২- অজু উম্মতে মুহাম্মাদীর আলামত; যেহেতু তারা কেয়ামতের দিবসে উজ্জ্বল অঙ্গ নিয়ে উপস্থিত হবে
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মত অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল ঝলমলে অবস্থা নিয়ে উপস্থিত হবে। কাজেই তোমাদের যে এগুলো দীর্ঘ করতে চায় সে যেন তা করে নেয়।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম।)
৩- অজু গুনাহ ও পাপ মিটিয়ে দেয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে অজু করে এবং সুন্দরভাবে অজু করে তার শরীর থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। এমনকি নখের নীচ থেকেও বের হয়ে যায়।’
(বর্ণনায় মুসলিম। )
৪- মর্যাদা বেড়ে যাওয়া
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয় সম্পর্কে খবর দেব না যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গুনাহ মিটিয়ে দেন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? তারা বললেন, অবশ্যই বলবেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, ‘কষ্ট সত্ত্বেও অজু পূর্ণভাবে করা, মসজিদের দিকে বার বার পদচালনা করা, সালাতের পর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। এটা হলো রিবাত।’(বর্ণনায় মুসলিম।)
ওযুর প্রথমে দোআ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ |(তিরমিযী )
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি |
ওযুর শেষে দোআ
উচ্চারণ: আশ্হাদু আল্ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু আহ্দাহু লা-শারীকালাহু অ আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু অ-রাসূলুহু |(মুসলিম )
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই | তিনি এক এবং তাঁর কোন অংশীদার নাই | আমি এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই হজরত মোহাম্মদ(সাঃ ) তাঁর দাস এবং তাঁর প্রেরিত দূত |
দ্বিতীয় দোআ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ্ আ’লনী মিনাত্ তাওয়াবীনা অজ্ আলনি মিনাল মুতাতহ্হিরীন |(তিরমিযী )অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে তওবাকারী এবং পাক-সাফ লোকেদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও |মসজিদে প্রবেশ করার দোআউচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা |(মুসলিম )অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও |মসজিদ হতে বাহির হওয়ার দোআউচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস্আলুকা মিন ফায্লিকা |(মুসলিম )অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি |
আযান:
আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার |
আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ – আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ |
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ্ – আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ্ |
হাইয়্যা আলাস্সালাহ্ – হাইয়্যা আলাস্সালাহ্ | (ডান দিকে মুখ করে)
হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ – হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ | (বাম দিকে মুখ করে)
আলাস্সালাতু খাইরুম্ মিনান্নউম – আলাস্সালাতু খাইরুম্ মিনান্নউম |(শুধু ফযরের আযানে)
আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার |
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ |
আযানের পর দোআউচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রব্বা হাজিহিদ দা’অতীত্ তাম্মাতি অস্স্বলাতিল ক্ব-ইমাতি আ-তি মুহাম্মানিল্ অসীলাতা অল্ ফাযীলাতা অবআ’স্হু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাযী অ-আ’দ্তাহু, ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মীআ’দ |(বায়হাকী, মিশকাত ৬৬)অর্থ: এইসব পরিপূর্ণ আহ্বান ও আসন্ন নামাযের প্রভু | হে আল্লাহ্ ! হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ ) কে জান্নাতের অসীলা নামক মনযিলটিও সম্মান দান করো এবং তুমি তাঁকে সেই মক্কা-মে মাহমুদ বা প্রশংসিত জায়গায় পৌঁছে দিও, যা তাঁকে দেবার জন্য তুমি ওয়াদা করেছো | নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খিলাফ করো না |একামত:একামতের শব্দগুলো আযানের মতোই হবে | তবে “হাইয়্যা আলাল ফালাহ্” এর পর অতিরিক্ত বলতে হবে —
ক্বা্দ ক্বা্- মাতিস সালাহ – ক্বা্দ ক্বা্- মাতিস সালাহ |কেবলামুখী হওয়া ও তাকবীরে তাহরিমা- নামাজ আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। মহান আল্লাহ তাআলার সামনে সে দাঁড়িয়ে এ অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত করবে। অন্তরে খুশু ও বিনম্রভাব সৃষ্টি করবে।- এরপর অন্তরে নামাজের নিয়ত করবে।- দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উঠাবে ও বলবে, «আল্লাহু আকবার»(বর্ণনায় মুসলিম)– এরপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জিতে ধরবে অথবা ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখবে, হোক তা নাভির নিচে অথবা বুকের ওপরে।ছানা পাঠ ও সুরা ফাতিহা তিলাওয়াতমুসল্লী তার মাথা নিচু করবে এবং সিজদার জায়গার প্রতি তাকিয়ে থাকবে। এরপর বলবে:سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ«আপনি পবিত্র-মহান হে আল্লাহ। আমি আপনার প্রশংসা করছি। আপনার নাম বরকতময়। আপনার মর্যাদা উঁচু। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।»(বর্ণনায় বুখারী)– এরপর গোপনে বলবে :أعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم«আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি দয়াময় পরম দয়ালু।»
(বর্ণনায় মুসলিম)– এরপর সূরা ফাতিহা পড়বে। শেষে বলবে«আমীন» অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি আমার প্রার্থনা কবুল করুন।- সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা অথবা মুসল্লীর পক্ষে কুরআন থেকে যা সহজ প্রথম দু রাকাতে পড়বে। ফজর, মাগরিব ও ইশার প্রথম দু রাকাতে প্রকাশ্য আওয়াজে কুরআন পড়বে।রুকু ও রুকু থেকে উঠাএরপর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাবে। দুই হাঁটুর ওপর দু হাতের আঙ্গুলগুলো প্রশস্ত করে এমনভাবে রাখবে, মনে হবে যেন সে তা ধরে আছে। মাথা ও পিঠ সমান্তরাল রাখবে। এরপর বলবে: سبحان ربي العظيم «অর্থাৎ পবিত্র-মহান আমার মহামহিম রব। এরপর মাথা উঠাবে এবং ইমাম ও একাকী নামাজ আদায়কারী বলবে বর্ণনায় তিরমিযী): سمع الله لمن حمده অর্থাৎ প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ তাআলা শুনেছেন। আর সকলেই বলবে»
(বর্ণনায় তিরমিযী)ربنا ولك الحمد «হে আমাদের রব, সকল প্রশংসা আপনার জন্যেই।»(বর্ণনায় তিরমিযী)রুকু থেকে উঠে, রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দাঁড়ানো অবস্থায়, দুহাত যেভাবে রেখেছিল, সেভাবে রাখা মুস্তাহাব।সিজদা ও সিজদা থেকে উঠা- মুসল্লী তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবে। সিজদায় যাওয়ার সময় দুই হাঁটু প্রথমে রাখবে, এরপর হাত, এরপর কপাল ও নাক। দুই হাত কান বরাবর অথবা কাঁধ বরাবর কেবলামুখী করে বিছিয়ে দেবে।দুই কনুই জমিন থেকে উঁচিয়ে রাখবে। বাহুর উর্ধ্বাংশ বগল, পেট ও রান থেকে দূরে রাখবে। সিজদাবস্থায় তিনবার বলবে: سبحان ربي الأعلى অর্থাৎ পবিত্র-মহান আমার রব, যিনি সর্বোর্ধ্ব। সিজদায় বেশি বেশি দুআ করবে।- এরপর তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে। এ সময় কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না। বাম পা বিছিয়ে তার ওপর বসবে। ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখবে। এ পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলামুখী করে রাখবে। দু হাত প্রশস্ত করে রানের ওপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো থাকবে কেবলামুখী। এ সময় বলবে:اللهم اغفر لي، وارحمني، واجبرني، واهدني، وارزقني«হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আমার প্রতি রহম করুন। আমার ক্ষত দূর করুন। আমাকে আপনি হিদায়েত ও রিযিক দান করুন।»(বর্ণনায় তিরমিযী)– এরপর তাকবীর দিয়ে প্রথম সিজদার মতোই দ্বিতীয় সিজদা করবে।- এরপর তাকবীর দেয়া অবস্থায় মাথা উঠাবে এবং দাঁড়ানোর পূর্বে স্থির হয়ে মূহুর্তকাল বসবে। মালিক ইবনে হুআইরেছ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, «তিনি স্থির হয়ে বসার পূর্বে দাঁড়াতেন না।»(বর্ণনায় বুখারী)– এরপর হাতের ওপর ভর করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে।- প্রথম রাকাতের মতোই দ্বিতীয় রাকাত আদায় করবে। তবে প্রথম রাকাতের মতো প্রারম্ভিক দুআ তথা ছানা পড়বে না।তাশাহ্হুদপ্রথম দু রাকাত পড়া শেষ হলে প্রথম তাশাহ্হুদের জন্য মুসল্লী বসবে। বাম পা বিছিয়ে ডান পা দাঁড় করিয়ে রেখে বসবে। উভয় হাত উরুর ওপর রাখবে। বাম হাত প্রশস্ত করে রাখবে। আর ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল ও অনামিকা আঙ্গুল গুটিয়ে রাখবে। আর মধ্যমা আঙ্গুলকে বৃদ্ধাঙ্গুলের সাথে চক্রাকারে রাখবে। আর তার তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা দেবে এবং তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। এবং বলবে:التحيات لله، والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إِله إِلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسوله«সমস্ত সম্মানজন সম্বোধন আল্লাহর জন্য। সমস্ত শান্তি-কল্যাণ ও পবিত্রতার মালিক আল্লাহ তাআলা। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।»
(বর্ণনায় বুখারী)এরপর দরুদ পড়বে ও বলবে:اللهم صل على محمد وعلى آل محمد، كما صليت على إِبراهيم وعلى آل إِبراهيم إِنك حميد مجيد. اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إِبراهيم وعلى آل إِبراهيم إِنك حميد مجيد«হে আল্লাহ, আপনি মুহম্মাদের প্রতি এবং মুহাম্মদের পরিবারের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমনিভাবে রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের প্রতি এবং ইবরাহীমের পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেমনিভাবে আপনি রবকত নাযিল করেছেন ইবরাহীমের প্রতি এবং ইবরাহীমের পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত।»
(বর্ণনায় আবু দাউদ)এরপর বলবে:اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك، إنك أنت الغفور الرحيم.«হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি নিজের ওপর অনেক জুলুম করেছি। আর গুনাহ তো কেবল আপনিই মাফ করেন। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।»
(বর্ণনায় বুখারী)অথবা বলবে:اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر فتنة المسيح الدجال«হে আল্লাহ, আমি জাহান্নামের আযাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। কবরের আযাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। দাজ্জালের অনিষ্টতা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।»
(বর্ণনায় বুখারী)সালামনামাজান্তে মুসল্লী তার ডানে ও বামে সালাম ফেরাবে এবং বলবে:السلام عليكم ورحمة الله(বর্ণনায় মুসলিম)নামাজ শেষে দুআ-যিকর- তিনবার أستغفر الله «আমি আল্লাহর মাগফিরাত চাচ্ছি) বলা।»
(বর্ণনায় মুসলিম)এরপর বলা:اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام«হে আল্লাহ, আপনি শান্তি। আর শান্তি আপনার পক্ষ থেকেই আসে। আপনি বরকতপূর্ণ, হে বড়ত্ব ও সম্মানের মালিক!»
(বর্ণনায় মুসলিম)এরপর বলা:لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير، اللهم لا مانع لما أعطيت، ولا معطي لما منعت، ولا ينفع ذا الجد منك الجد«আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। এবং তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ, আপনি যা দেবেন তাতে বাধাদানকারী কেউ নেই। আর আপনি যা দেবেন না তা দেয়ার কেউ নেই। কোনো মর্যাদাশালীকে তার মর্যাদা (আপনার আযাবের ব্যাপারে) কোনো উপকার করতে পারে না।»
(বর্ণনায় বুখারী)এরপর বলা:لا إله إلا الله وحده لا شريك له ، له الملك، وله الحمد وهو على كل شيء قدير. لا حول ولا قوة إلا بالله، لا إله إلا الله، ولا نعبد إلا إياه، له النعمة وله الفضل وله الثناء الحسن، لا إله إلا الله، مخلصين له الدين ولو كره الكافرون«আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। এবং তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোনো উপায় ও ক্ষমতা নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করি। নিয়ামত তাঁরই, অনুগ্রহও তাঁর। উত্তম প্রশংসাসমূহও তাঁর। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা তাঁর দীন তাঁরই নিমিত্তে একনিষ্ঠভাবে পালন করি, যদিও কাফেররা অপছন্দ করে।»
(বর্ণনায় মুসলিম)سبحان اللهপবিত্র মহান আল্লাহ তাআলা (৩৩ বার)الحمد للهসমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার (৩৩ বার)الله أكبرআল্লাহ সর্বাপেক্ষা বড় (৩৩ বার)।একশততম বারে বলবে:لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير«আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। এবং তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।»(বর্ণনায় মুসলিম)নামাজান্তে পঠিতব্য আরেকটি দুআ হলো:اللهم أعني على ذكرك، وشكرك، وحسن عبادتك« হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার যিকর, আপনার শুকরিয়া এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত আদায়ের ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)– আয়াতুল কুরসী পড়া। সূরা ইখলাস, সূরা আল ফালাক ও সূরা আন-নাস পড়া। (বর্ণনায় মুসলিম)– ফজরের নামাজে সালামের পর এই দুয়া পড়া:اللهم إني أسألك علما نافعا ، ورزقا طيبا ، وعملا متقبلا« হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, উত্তম রিযক এবং কবুল হওয়া আমল প্রার্থনা করি।»(বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)আয়েশা রাযি. বলেন, «রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাকবীর দিয়ে নামাজ শুরু করতেন। সূরা ফাতিহা পড়তেন। যখন তিনি রুকুতে যেতেন মাথা উপরের দিকেও রাখতেন না আবার একেবারে সোজাও করতেন না, বরং এ দুয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে রাখতেন। যখন তিনি রুকু থেকে উঠতেন সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিজদায় যেতেন না। আর যখন তিনি সিজদা থেকে উঠতেন তখন সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন না। তিনি প্রতি দু রাকাত পরপর আত্তাহিয়াতু পড়তেন। তিনি বাম পা বিছিয়ে দিতেন ও ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখতেন। তিনি শয়তানের ন্যায় উপবেসন থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিতেন। আর হিংস্রপ্রাণী যেভাবে দু বাহু জমিনে বিছিয়ে রাখে সেভাবে মুসল্লী ব্যক্তির দু বাহু জমিনে বিছিয়ে রাখতে বারণ করতেন। আর তিনি সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করতেন।»(বর্ণনায় মুসলিম)শয়তানের ন্যায় উপবেসন করার অর্থ হলো নিতম্বের ওপর বসে দু পা সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা এবং দু হাত মাটিতে রাখা ঠিক কুকুরের বসার মতো।মাসায়েলমুসল্লীদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছেন যারা তাশাহ্হুদের সময় ও দুই সিজদার মধ্যখানে ওপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে বসলে খুব ব্যথা অনুভব করেন। যদি অবস্থা এমন হয় তাহলে যেভাবে বসলে কষ্ট হয় না, সেভাবেই বসতে পারবে; কেননা কষ্টকর অবস্থা সহজতার আগমন ঘটায়।নামাজের আকার-প্রকৃতিতে নারী ও পুরুষ সমান। তবে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী কিছু বিষয়ে নারীর নামাজ পুরুষের নামাজ থেকে ভিন্ন।