ইউসুফ (আ) ছিলেন অসম্ভব সৌন্দর্যের অধিকারী। কিন্তু জীবনের একটি পর্যায়ে এসে এটিই তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছিলো। এই সৌন্দর্যই তাঁর জীবনে প্রচণ্ড দুঃখ ও দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
অন্যদিকে, মূসা (আ) ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু এই গুণটিই তাঁর জন্যও এসেছিলো বিশাল পরীক্ষার কারণ হয়ে।
আমাদের একেকজনকে আল্লাহ যেসব নেয়ামত দিয়েছেন সেগুলো আমাদের জীবনে প্রচুর কল্যাণের উৎস হতে পারে, কিন্তু এগুলোই আবার আমাদের জীবনের বিশৃঙ্খলা ও কষ্টের কারণও হতে পারে। এভাবেই হয়তো আল্লাহ আমাদের সর্বোচ্চ পরীক্ষা নেন।
আপনাকে আল্লাহ যে নেয়ামতের উপহারটি দিয়েছেন সেটা শয়তানও অবগত আছে। কিন্তু সে আপনার চারপাশের মানুষজনকে আপনার ওইসব নেয়ামতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে এবং আপনাকে এমন অনুভূতি দেয় যেন আপনি আল্লাহ প্রদত্ত এসব নেয়ামতগুলোকে অভিশাপ হিসেবে দেখেন।
আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কেবল বাহ্যিক কল্যাণ যেমন চেহারা, শারীরিক শক্তি, সম্পদ ও জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েই রহমতের পরশে জড়িয়ে নেননি, তিনি আপনাকে আরো অনেক গুণ যেমন সহমর্মিতা, দয়া, সহৃদয়তা, কল্যাণকামিতা, কল্যাণ প্রচারের প্রতি ভালোবাসা বা অন্যকে সদুপদেশ দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদিও দিয়েছেন। শয়তান আপনার মধ্যকার এসব গুণগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং আপনার থেকে এগুলো ছিনিয়ে নিতে চায়।
এটা সে কীভাবে করে?
আপনি যদি দয়াবান হয়ে থাকেন তাহলে শয়তান আপনার জীবনে এমনসব মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে যাদের ওপর আপনি সর্বদা দয়া দেখিয়েছেন। শয়তান তাদেরকে এমনভাবে উত্তেজিত করে যে তখন তারা আপনার প্রতি সর্বোচ্চ খারাপিপনা দেখায়।
আপনি যদি অন্যদের সাহায্যকারী হয়ে থাকেন তবে আপনি যাদের সহায়তা করেছিলেন শয়তান ঠিক ওইসব লোককেই আপনার প্রতি এমনভাবে উত্তেজিত করে তুলে তাদের দিয়ে আঘাত দেয় যে আপনিই যেন তাদের শত্রু।
আপনি যদি দানশীল হয়ে থাকেন তবে শয়তান দানগ্রহণকারী এমন সব ব্যক্তিকে দিয়ে উল্টো আপনাকে লোভী হিসেবে অভিযোগ আরোপ করায়।
আপনি যদি শিক্ষক হয়ে থাকেন তবে শয়তান আপনার কোনো ছাত্রকে দিয়ে বলাবে আপনি কতোটা অজ্ঞ।
মূলকথা হলো — আপনি কাউকে সহায়তা করেছিলেন বা কারো প্রতি নেক নজর দিয়েছিলেন, শয়তান ঠিক ওইসব লোকদেরকেই কোনো উপায়ে আপনার প্রতি মন্দ হতে প্ররোচিত করে।
আমাদের নবী ﷺ এমন ওহীর বাণী নিয়ে এসেছিলেন যা হৃদয়গুলোকে একই বন্ধনে বাঁধিত করে এবং আত্মীয় ও পরিবারের বন্ধনগুলোকে দৃঢ় করে। এজন্য শয়তান পরিবারের সর্বাপেক্ষা কাছের ব্যক্তিকে দিয়েই পরিবার ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ তুলে আনে।
শয়তান এমনটি কেন করে?
আল্লাহ আপনাকে যেসব নেয়ামত দিয়েছেন — যেমন দান করা, শিক্ষা দেওয়া, অন্যকে সহায়তা করা, অন্যের প্রতি সহৃদয় হওয়া, সহমর্মিতাপূর্ণ হওয়া, সেবা করা বা ধৈর্য ধরা ইত্যাদি — শয়তান আপনার প্রতি এমনসব ঘটনা ঘটায় যেন আপনি আপনার প্রতি আল্লাহর দেওয়া ওসব নেয়ামতকে আর নেয়ামতই মনে না করেন; ওগুলো যেন আপনার থেকে অন্যদের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জিনিস-মাত্র। ওগুলো বরং অভিশাপ মনে হয়। সে ভাবায়, আপনার উচিত ওসব বিষয়ে ‘সময়ের অপচয়’ বন্ধ করা এবং আপনার কেবল আপনার নিজের জীবন নিয়েই ভাবা উচিত। নিজে বাঁচলে বাপের নাম! এভাবে ভাবতেই শয়তান আপনাকে প্ররোচিত করে।
এরকম করে শয়তান আপনার থেকে আল্লাহর নেয়ামতগুলো ছিনিয়ে নেয়, যেগুলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনার ব্যবহার করার কথা ছিলো।
মনে রাখবেন, ওসব নেয়ামত আপনাকে দেওয়া হয়েছে যেন আপনি জীবনে কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পান। আল্লাহ দেখতে চান ওসব নেয়ামতগুলো আপনি কীভাবে আপনার মাঝে লালন করেন। সেগুলো সস্তা নয়, মূল্যহীনও নয়।
মানুষের দেওয়া কষ্টগুলোকে দমন করে আপনি কি আল্লাহর প্রদত্ত ওসব নেয়ামতগুলোকে ধরে রাখার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেন?
এই ইচ্ছাটি আপনাকে একদিন দেখানো হবে আর দেখানো হবে আল্লাহর ওসব নেয়ামতের কতটুকু মূল্য আপনার হৃদয়ে গেঁথে ছিলো। মানুষের সেবা করার জন্য আপনার ভেতরে যে দয়া-মমতা বিদ্যমান সেগুলো অন্যদের বিষাক্ত অবমূল্যায়নের কারণে দূরে সরিয়ে দেবেন না।
কিছু মানুষের বিদ্বেষের কারণে আল্লাহ প্রদত্ত এসব নেয়ামতকে দূরে ঠেলে দেবেন না। যারা আপনাকে কষ্ট দেয় তাদের চিন্তা দ্বারা আপনার মনকে আচ্ছন্ন করবেন না। তাদের কষ্ট যেন আপনার মনকে তাড়িত না করে। সেসব কষ্ট যেন পেছনের আয়নায় দেখা দাগের মতোই ছোট থেকে অধিকতর ছোট হতে থাকে। আপনার জীবনে করার মতো অনেক বড় বড় বিষয় রয়েছে। সুতরাং শয়তান যেন আপনাকে আচ্ছন্ন করে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতগুলোকে ছিনিয়ে নিতে না পারে।
তাদের প্রতি আপনার সেরা প্রতিউত্তর হতে পারে তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়া এবং আগের তুলনায় আরো অধিক ভালো কাজ করা। শয়তানকে কিছু দিয়েই কিছু করা যায় না, একমাত্র কল্যাণ কাজ ছাড়া।